অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কিবোর্ড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা কতটা যৌক্তিক এবং এটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য কতটা নিরাপদ।

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated
আপনি জানলে অবাক হবেন যে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কম্পিউটার জগতে প্রথম বাংলাদেশেই প্রবেশ করেছিল। অর্থাৎ আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এই দেশগুলোর আগে সর্বপ্রথম বাংলাদেশেই কম্পিউটারের ব্যবহার হয় এবং ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম এই কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনা হয়। আর কম্পিউটারে বাংলা ভাষায় লেখালেখি শুরু ১৯৮৭ সাল থেকে। যা মূলত ইংরেজি ফন্টের উপর ভিত্তি করে মাইনুলিপি নামক একটি ফন্টের মাধ্যমে লেখা হতো। অর্থাৎ বাংলার জন্য আলাদা কোনো কিবোর্ড লেআউট ডিজাইন করা হয়নি। ইংরেজি লেআউটের উপর ভিত্তি করে বাংলা লেখা হতো। মাইনুলিপি এর মতো এরপরে আরও কয়েকটি ফন্টের আবিস্কার হয় যেগুলোও ঠিক এই একই পদ্ধতিতে লেখা হতো। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে বাংলার উপর ভিত্তি করে একটি কিবোর্ড লেআউটের ডিজাইন উদ্ভাবিত হয়। যা আনন্দ কম্পিউটার্স নামক একটি বেসরকারি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবন করে। আর এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী এবং এই কিবোর্ডের উদ্ভাবক ছিলেন বর্তমান সময়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তফা জব্বার। এই কিবোর্ড লেআউটটির নাম দেওয়া হয় বিজয় কিবোর্ড লেআউট নামে। আর এর পর বাংলা লেখার জন্য আরও অনেক কিবোর্ড লেআউটই বের হয়। তবে কম্পিউটারের ক্ষেত্রে বাংলা লেখার জন্য শেষপর্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই বিজয় কিবোর্ড প্রোগ্রাম।

প্রযুক্তির একের পর এক আবিস্কারের ধারাবাহিকতায় কম্পিউটার থেকে এখন স্মার্টফোনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। আর এই স্মার্টফোনেও চাইলে এখন বাংলা লেখা যায়, যার জন্যও একটি বাংলা কিবোর্ডের প্রয়োজন পড়ে। তবে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বাংলা লেখার জন্য কম্পিউটারের মতো বিজয় কিবোর্ড জনপ্রিয় না হয়ে এর স্থলে অন্যান্য বাংলা কিবোর্ডগুলি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে রিদ্মিক কিবোর্ড। এই কিবোর্ডটিতে ইংরেজি লেআউটের পাশাপাশি বাংলা লেখার জন্য কয়েকটি লেআউট রয়েছে। শুরুর দিকে এটিতে বাংলা লেখার জন্য অভ্র এবং বিজয় লেআউট ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে বিজয় কিবোর্ডের কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ জনাব মোস্তফা জব্বার ২০১৫ সালের দিকে কপিরাইট প্যাটেন্ট এর উপর ভিত্তি করে স্মার্টফোনের জনপ্রিয় কিবোর্ড রিদ্মিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে গুগল প্লে-স্টোরের কর্তৃপক্ষের কাছে। যার ফল স্বরূপ গুগল তা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। তবে এতে রিদ্মিক কিছুদিন প্লে-স্টোরে না থাকলেও পরবর্তীতে তার বাংলা লেখার লেআউটের পরিবর্তন এনে এটি আবার গুগল প্লে-স্টোরে পাবলিশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এতো বাধাবিপত্তির পরও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বাংলা লেখার জন্য রিদ্মিক কিবোর্ডই সবচেয়ে জনপ্রিয়।

সম্প্রতি গত ১৩ই জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বাংলা কিবোর্ড হিসেবে বিজয় কিবোর্ড প্রোগ্রাম বা অ্যাপকে ডিফল্ট কিবোর্ড হিসেবে স্থাপন বা ইনস্টল করে দেওয়ার জন্য অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে করে এখন বাজারে যে নতুন স্মার্টফোনগুলি আসবে, সেগুলিতে ডিফল্টভাবে বাংলা লেখার জন্য বিজয় কিবোর্ড আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকবে। এটি দিয়ে ব্যবহারকারী অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বাংলা লিখতে পারবে। এখন বিটিআরসি এর এই ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে উক্ত বিষয়ের উপর সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এতে করে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে যে এটা আসলে কতটা যুক্তিসঙ্গত এবং কতটা নিরাপদ ইত্যাদি। তো আজকে তা নিয়েই মূলত আমার এই টপিক।

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কিবোর্ড এর বাধ্যবাধকতাঃ

বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় মূলত বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন এবং পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ সহ ইত্যাদি করে থাকে। বাংলাদেশে স্মার্টফোন আমদানি, রফতানি এবং বিক্রয় এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণেই হয়ে থাকে। স্মার্টফোনের বিষয়বস্তু তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে তারা গত ১৩ই জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বাংলা কিবোর্ড হিসেবে বিজয় কিবোর্ড প্রোগ্রাম বা অ্যাপকে ডিফল্ট কিবোর্ড হিসেবে স্থাপন বা ইনস্টল করে দেওয়ার জন্য অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা আমি উপরে বলেছিলাম। অর্থাৎ এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে যত অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন কোম্পানি রয়েছে বা যারা ব্যবসা করতেছে তাদের এখন থেকে স্মার্টফোনের মধ্যে ডিফল্ট কিবোর্ড হিসেবে বিজয় কিবোর্ড বাধ্যতামূলকভাবে ইনস্টল বা সেট করে দিতে হবে। যেটা আমরা সাধারণত স্মার্টফোনে ডিফল্ট কিবোর্ড হিসেবে দেখে থাকি গুগলের জিবোর্ড কিবোর্ডটি।

তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বা খবর দেখে মনে করেছিলেন যে তাদের হাতে থাকা স্মার্টফোনের মধ্যে বাংলা লেখার জন্য বাধ্যতামূলক এই বিজয় কিবোর্ডটি ইনস্টল করে নিতে হবে। আসলে কিন্তু তা নয় এই নির্দেশনাটি মূলত অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলোর জন্য দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আপনি সামনে থেকে নতুন যে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজার থেকে ক্রয় করবেন সেগুলির ক্ষেত্রে এই নির্দেশনাটি প্রযোজ্য।

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কিবোর্ড বাধ্যবাধকতার যৌক্তিকতা ও নিরাপত্তা নিয়ে কিছু প্রশ্নঃ

বাংলাদেশ সরকারের এই মন্ত্রনালয় থেকে যে, এই নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে এর যুক্তি-যৌক্তিকতা কতটুকু এবং এর ব্যবহারের আসলে কতটা নিরাপদ এই নিয়ে বিশিষ্ট মহল থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের মনেও বেশ প্রশ্ন জেগে উঠেছে। যা নিয়ে বর্তমান সময়ে বেশ সমালোচনা চলতেছে বা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। চলুন আমরা এইরকম কিছু প্রশ্ন এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নেই।

ব্যবহারকারীরা কী উপকৃত হবে?

স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলক যদি বিজয় কিবোর্ড ইনস্টল করে দেওয়া হয় এতে করে ব্যবহারকারীরা কতটা উপকৃত হবে তা নিয়ে একটি প্রশ্ন তৈরি হয়ে যায়। মূলত স্মার্টফোনে বাংলা লেখার জন্য বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ রয়েছে। যেগুলি বিজয় অ্যাপ থেকেও ফিচার বা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অনেক উন্নত এবং যুগউপযোগী। তাহলে সেগুলি বাদ দিয়ে কেন একজন ব্যবহারকারী এই বিজয় অ্যাপটি ব্যবহার করবে। এর উত্তরে বিজয় কিবোর্ডের আবিস্কারক এবং বাংলাদেশ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছেন,

“ব্যবহারকারীর দিক থেকে সে (একজন ব্যবহারকারী) প্রথমত বিনা মূল্যে একটি সফটওয়্যার পাচ্ছে, বাংলা লিখতে পারবে। এর বেশি আর কী সুবিধা এখান থেকে পাওয়ার আছে?” এখন এই অ্যাপটি বাধ্যতামূলক করার কারণে প্রতিটি স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে গুগল থেকে অনুমতি নিতে হবে অ্যাপ ইনস্টল প্যাকেজের জন্য। অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ক্রয় করার পর আপনারা আগে থেকে ইনস্টল করা যে অ্যাপ দেখতে পান, সে অ্যাপের প্যাকেজ বা অ্যাপগুলি ইনস্টল করার আগে গুগলের অনুমতি নিতে হয়। যা মূলত সকল স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে একই অ্যাপ প্যাকেজ থাকে। গুগলকে এই অনুমতি নেওয়ার সময় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের ফি প্রদান করতে হয়। এখন নতুন করে এই বিজয় অ্যাপটি প্রত্যেকটি স্মার্টফোন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলিকে অ্যাপের প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গুগলের অনুমতি নিতে হবে এবং একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের ফি প্রদান করতে হবে। যা দিনশেষে হিসেবে করলে সাধারণ ব্যবহারকারীর গাঢ়েই পড়বে। কোম্পানি কিন্তু তা বহন করবে না। সহজ কথায় তাদের উৎপাদন ব্যায় যদি বেড়ে যায় তাহলে তার বাজার মূল্যও বৃদ্ধি করে দিবে। এতে ঘুরেফিরে সাধারণ ব্যবহারকারীদেরই খরচ বহন করতে হবে। এতে সাধারণ ব্যবহারকারীর উপকার হওয়ার পরীবর্তে অপকারই হবে। কারণ স্মার্টফোনে এমনিতে ফ্রিতেই বাংলা লেখার জন্য জনপ্রিয় বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে।

ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে কিনা?

কিবোর্ড জাতীয় সফটওয়্যার বা অ্যাপের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে এই নিরাপত্তা দিকগুলো। একজন ব্যবহারকারী কিবোর্ড দিয়ে যখনই কোনো কিছু টাইপ করুক না কেন তা চাইলে রেকর্ড করা সম্ভব। যা যেকোনো কিছুর পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে, আর্থিক লেনদেন কিংবা যে কাউকে পাঠানো ক্ষুদে বার্তা সহ সবই। কিলগার নামক ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস এর পদ্ধতি অবলম্বন করে একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর ডিজিটাল নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে।

ক্ষোধ বিজয় কিবোর্ডের গোপনীয় নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে এটি ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিন্ত নয়। তার মানে বুঝেন একজন ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার বিষয়টি আসলেই কতটা নিরাপদ। যা নিয়ে সকল নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মাঝে সঙ্কা তৈরি করেছে।

বাধ্যবাধকতা যৌক্তিক কিনা?

একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে স্মার্টফোনে বাংলা লেখার জন্য কোন কিবোর্ড ব্যবহার করবে না করবে তা সম্পূর্ণ তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। কিন্তু তা যদি দেশের সরকার বাধ্য করে দেয় যে বাংলা লিখতে হলে আপনাকে অবশ্যই এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে হবে। আর এতে করে স্বাভাবিকভাবে আপনার মনে সন্দেহ জাগতে পারে যে আসলে এটি কতটা নিরাপদ। যেহেতু এমনিতেই বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। দিন দিন সাধারণ জনগণের মতামতের দিক সংকুচিত হচ্ছে। তখন সরকারের এইরকম একটা সিদ্ধান্তকে সবাই সন্দেহের চোখেই দেখে বা দেখবে এটাই স্বাভাবিক। যা একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবেই না, এই দেশের সকল নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতেই সরকার সাধারণ জনগণকে মনিটরিং করার জন্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাই তেনাদের মধ্যে সরকারের এই বাধ্যবাধকতার কোনো যৌক্তিকতাই নেই।

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.